মুনওয়ার আলম নির্ঝর
আজকের এই দিনটি বাংলাদেশের চলচ্চিত্রের ইতিহাসে এক অবিস্মরনীয় দিন। কারণ ১৯৫৬ সালের আজকের দিনে মুক্তি পেয়েছিল বাংলাদেশ তথা তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের প্রথম স্থানীয়ভাবে নির্মিত পূর্ণদৈর্ঘ্য সবাক বাংলা চলচ্চিত্র ‘ মুখ ও মুখোশ ’।
মুক্তিপ্রাপ্ত এই ছবিটি পরিচালনা করেন আব্দুল জব্বার খান। ইকবাল ফিল্মস্ এই ছবিটি অর্থায়ন ও চিত্রায়নে সহায়তা করে। ছবিটির প্রথম প্রদর্শনী হয় মুকুল প্রেক্ষাগৃহে (বর্তমান আজাদ প্রেক্ষাগৃহ)। এটি ঢাকা, চট্টগ্রাম, নারায়ণগঞ্জ এবং খুলনায় একযোগে মুক্তি পায়। সেই অঞ্চলের প্রথম চলচ্চিত্র হিসাবে দর্শকমহলে এটি নিয়ে আগ্রহের সৃষ্টি হয়। প্রথম দফায় মুক্তির পর চলচ্চিত্রটি ৪৮,০০০ রুপি আয় করে।
আবদুল জব্বার খানের ‘ডাকাত’ নাটক হতে চলচ্চিত্রটির কাহিনী নেয়া হয়। প্রথমে ছবিটার নামও রাখা হয়েছিল ডাকাত পরে ফজল শাহাবুদ্দিনের পরামর্শে নাম রাখা হয় ‘মুখ ও মুখোশ’। ১৯৫৩ সালে আব্দুল জব্বার খান চলচ্চিত্রটির কাজ শুরু করেন। সে সময় পূর্ব পাকিস্তানে নিজস্ব কোন চলচ্চিত্র শিল্প গড়ে উঠেনি। স্থানীয় সিনেমা হলগুলোতে কলকাতা অথবা লাহোরের চলচ্চিত্র প্রদর্শিত হতো।
পশ্চিম পাকিস্তানের চলচ্চিত্র প্রযোজক এফ. দোসানির পূর্ব পাকিস্তানে চলচ্চিত্র প্রযোজনার ব্যাপারে নেতিবাচক মন্তব্যে ক্ষুদ্ধ হয়ে জব্বার খান চলচ্চিত্রটি নির্মাণে উদ্যোগী হন। জব্বার খান দুই বছর ধরে ছবিটির কাজ করেন। ১৯৫৪ সালের ৬ই আগস্ট আবদুল জব্বার খান তার পরিচালনায় প্রথম সবাক চলচ্চিত্র ‘মুখ ও মুখোশ’-এর মহরত করেন হোটেল শাহবাগে। তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের গভর্নর ইস্কান্দার মির্জা ছবির মহরতের উদ্বোধন করেন।
স্থানীয় অভিনেতারা, চলচ্চিত্রে অভিনয়ের পূর্ব অভিজ্ঞতা ছাড়াই বিনা পারিশ্রমিকে এই ছবিতে অভিনয় করেন। স্থানীয়ভাবে কোন ফিল্ম প্রোডাকশন স্টুডিও না থাকায়, ছবির নেগেটিভ ডেভেলপের জন্য লাহোরে পাঠানো হয়।
লাহোরের শাহনূর স্টুডিওতে ‘মুখ ও মুখোশ’-এর পরিস্ফূটন কাজ সম্পন্ন হয়। ১৯৫৬ সালে ছবির কাজ শেষ হয় কিন্তু তিনি ছবিটি নিয়ে প্রথমে ঢাকায় ফেরার অনুমতি পাননি। ‘মুখ ও মুখোশ’র প্রথম প্রদর্শনী হয় লাহোরে। ঢাকায় ফিরে আসার পর ছবিটি প্রদর্শনীর বিষয়ে কোন প্রেক্ষাগৃহের মালিকের কাছ থেকে আশানুরূপ সাড়াও পাননি। তবে এ অবস্থা কাটাতে বেশি সময় লাগেনি। অল্পদিন পরেই ‘মুখ ও মুখোশ’ ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ, চট্টগ্রাম এবং খুলনায় একযোগে প্রদর্শিত হয়। ছবিটির প্রিমিয়ার শো অনুষ্ঠিত হয় রূপমহল প্রেক্ষাগৃহে।ছবির প্রথম প্রদর্শনীতে প্রধান অতিথি ছিলেন শেরেবাংলা এ কে ফজলুল হক।
প্রথম শুটিং কালীগঞ্জে ১৯৫৩ সালের ডিসেম্বর মাসে।শুটিং শেষ হয় ১৯৫৫ সালের ৩০ শে অক্টোবর।শুটিংয়ের মূল স্থানগুলো ছিল সিদ্ধেশ্বরী, তেজগাঁও, রাজারবাগ, কমলাপুর, লালমাটিয়া, জিঞ্জিরা এবং টঙ্গীর বিভিন্ন জায়গায়।ছবিটির নির্মাণব্যয় ছিল ৬৪,০০০.০০ রুপি।
চরিত্রসমূহ
ইনাম আহমেদ – মুখ্য পুরুষ চরিত্র
আব্দুল জব্বার খান – দ্বিতীয় প্রধান পুরুষ চরিত্র
পূর্ণিমা সেনগুপ্ত – প্রধান নারী চরিত্র
জহরত আরা। (তখন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়-এর ছাত্রী )
পিয়ারী বেগম। (তখন ইডেন কলেজের ছাত্রী )
রহিমা খাতুন।
বিলকিস বারী।
আমিনুল হক। (তখন ঢাকা বেতার কেন্দ্র-এ চাকুরীরত )
কলাকুশলীবৃন্দ
চিত্রনাট্য – বিপ্রদাশ ঠাকুর (কলকাতা)।
চিত্র গ্রহণ – মুরারী মোহন (উপদেষ্টা )। পরে এই দায়িত্ব তুলে নেন সহকারী চিত্রগ্রাহক জামান।
অঙ্গসজ্জা – শ্যাম বাবু (আসল নাম শমসের আলী )।
সংগীতে কন্ঠ – আবদুল আলীম এবং মাহবুবা হাসনাত ।
সঙ্গীত পরিচালক – সমর দাস।
সহকারী সঙ্গীত পরিচালক – ধীর আলী।
শব্দ গ্রহণ – মইনুল ইসলাম।
সম্পাদক – আব্দুল লতিফ (পশ্চিম পাকিস্তান) ।